শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২৪ অপরাহ্ন

৫ সহস্রাধিক প্রতিবন্ধীদের মানবেতর জীবন যাপন

৫ সহস্রাধিক প্রতিবন্ধীদের মানবেতর জীবন যাপন

সাইফুল ইসলাম, বাউফল: পটুয়াখালীর বাউফলে ৫ সহস্রাধিক প্রতিবন্ধীদের জন্য নেই আলাদা কোনো সুযোগ সুবিধা। ওই সব পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, উপজেলায় ১৪৭ টি গ্রামে ৫ সহস্রাধিক প্রতিবন্ধীদের জরিপ আওতায় নিয়ে ৪৪৭৬ জন প্রতিবন্ধী চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ যখাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের জন্য পরিবার থেকে শুরু করে সমাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ সব প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ গড়ে উঠেনি। নেই বিনোদনের কোনো উপকরন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারছে না। পাচ্ছে না পছন্দমতো খাদ্য গ্রহণ করতে। সরেজমিন কয়েকজন প্রতিবন্ধী পরিবারের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বাউফল পৌর এলাকা দাশপাড়া আলাউদিন মিয়ার ২ কন্যা সন্তান প্রতিবন্ধী। জেসমিন (২১), তানজিলা ১৫)। শারীরিক মানষিক প্রতিবন্ধী।

স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। অভাবী সংসারে মাতা জবেদা এ দুই প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে। পাশের এলাকায় রয়েছে মালেক মৃধার ৩ সন্তান প্রতিবন্ধীী। সাইফুল (১৮), চুমকি (১৪), আবদুল্লাহ (১২)। মালেক দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্য এলাকায় জীবন যাপন শুরু করলে ৩ সন্তান নিয়ে মাতা অজেফা দু:খের বহন করতে হচ্ছে। ওই এলাকায় রয়েছে নুর হোসেন কন্যা শাহিনা (২২)। শারীরিক প্রতিবন্ধী। কোমরের নিচ চিকন হয়ে গেছে। স্বাভাবিক জীবন চলাফেরা করতে পারেনা। একই পাড়ায় সিদ্দিক প্যাদা ১৪ বছরের কন্যা আয়েশা। খাটো। সবোর্চ্চ দেড় ফুট লম্বা হবে। পরিবার তাকে নিয়ে কষ্টের শেষ নেই। এ সময় কথা হয় মদনপুরা গ্রাসে দ্বিাপালী রানী সাথে তার কন্যা কল্পনা রানী। বয়স ১১ বছর। শারীরিক ও মানুষিক প্রতিবন্ধী। সারাদিন মুখ থেকে লালা পড়ে। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য জন্ম গ্রহণ করে থাকে। বেঁচে থাকার প্রথম বৈশিষ্ট হচ্ছে বড়ো হবে এবং সে তার নিজের জীবিকা সংগ্রহ করবে।

খেয়ে পড়ে ভালো ভাবে বেঁচে থাকবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম যে কোনো কারনে প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে। তাহলে নিজের জন্য কষ্টকর তেমনি সমাজ ও পরিবারের জন্য আরেকটি বোঝা। উন্নয়ন কর্মী সালমাবেগম জানান, প্রতিবন্ধী শিশুর সুযোগ সুবিধা অনুসন্ধান করতে গিয়ে উপজেলা পর্যায়ে কোনো ইতিবাচক চিত্র প্রতিনিধির চোখে পড়েনি। গৃহের বাইরে আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধী হিসাবে আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয় না। উপজেলার সাড়ে তিনশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীর শিশুর জন্য আলাদা টয়লেট, খেলা ধুলার মাঠ কিংবা সরঞ্জমাদী রাখার ব্যবস্থা করেনি। প্রতিবন্ধী হচ্ছে তাতে কি। সেতো একজন মানুষ। দূর্ঘটনা কবলিত কিংবা প্রকৃতি কারণ হোক যে কোনো একটি কারনে প্রতিবন্ধী হচ্ছে। তাকে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সবাই অবহেলার চোখে দেখে। সহানুভূতি সহযোগিতা করা প্রয়োজন। আগামী দিনগুলো বেচে থাকার জন্য আত্ন নির্ভশীল করার লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে কারিগরি শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। খোজ নিয়ে জানাগেছে, প্রত্যেক ইউনিয়নে ২/১ টি স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী হিসাবে আলাদা কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। সাধারন ছাত্রছাত্রীদের মতো শিক্ষা উপকরন ও লেখাপড়া গ্রহণ করতে হবে।

একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, বাউফল উপজেলার ১৪৭ টি গ্রামে ৫৩৬৫ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। এর মধ্যে শারীরিক ও মানুষিক প্রতিবন্ধী। উপজেলা সমাজ সেবা তথ্যানুসারে চলতি অর্থ বছরে ১৫শত ৫৬ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। মাসিক ভাতার পরিমান হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৫শ টাকা। যে ভাতা ওই প্রতিবন্ধী শিশুর মাসিক খরচের দশের একাংশ মাত্র। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। শিশুর প্রয়েজনার্থে যা প্রয়োজন। আর্থিক সংকট কারনে সে চাহিদা পূরন হচ্ছে না। উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মনিরুজ্জামান প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, সরকারি প্রতিবন্দীদের কার্যক্রম আওতায় নিয়ে ১৫৫৬ জন ভাতা, ২ জন ক্ষুদ্র ঋন, ৩শ জন দলিত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান চলমান প্রক্রিয়া। ডাক্তারি পরীক্ষা কার্যক্রম করে প্রতিবেদন প্রদানের মাধ্যমে ক্রমান্নয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিক্তিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |